
______পূর্ণেন্দু পত্রী
– কি করছো?
– ছবি আকঁছি।
– ওটা তো একটা বিন্দু।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই বৃত্ত হবে। কেন্দ্র হবে তুমি। আর আমি হবো বৃত্তাবর্ত।
– কিন্তু আমি যে বৃত্তে আবদ্ধ হতে চাই না। আমি চাই অসীমের অধিকার।
– একটু অপেক্ষা করো। . . . এবার দেখো।
– ওটা কি? ওটা তো মেঘ।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই আকাশ হবে। তুমি হবে নি:সীম দিগন্ত। আর আমি হবো দিগন্তরেখা।
– কিন্তু সে তো অন্ধকার হলেই মিলিয়ে যাবে। আমি চিরন্তন হতে চাই।
– আচ্ছা, এবার দেখো।
– একি! এ তো জল।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই সাগর হবে। তিনভাগ জলের তুমি হবে জলকন্যা। আর আমি হবো জলাধার।
– আমার যে খন্ডিতে বিশ্বাস নেই। আমার দাবী সমগ্রের।
– একটু অপেক্ষা করো। এবার চোখ খোল।
– ওটা কি আঁকলে? ওটা তো একটা হৃদয়।
– হ্যাঁ, এটা হৃদয়। যেখানে তুমি আছো অসীম মমতায়, চিরন্তন ভালোবাসায়। এবার বলো আর কি চাই তোমার?
– সারাজীবন শুধু ওখানেই থাকতে চাই।
(পূর্ণেন্দু পত্রী (Purnendu Patri) ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন বাঙালি সাহিত্যিক, কবি, চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর জন্ম ১৯৩১ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায়। সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে তিনি কবিতা, গল্প, চিত্রকলা এবং চলচ্চিত্রে সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন।
তাঁর লেখা সংলাপ, যেমন “কথোপকথন” সিরিজ, বিমূর্ততা ও রূপকের মাধ্যমে প্রেম, পরিচয় ও অস্তিত্বের গভীর বোধকে ছুঁয়ে যায়। তাঁর রচনা ভাষায় সংক্ষিপ্ত অথচ ভাবনায় অসীম, যা পাঠকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে।
তিনি সত্যজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং “পৃথিবী” নামের সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র “স্ট্রাকচার” আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়। পূর্ণেন্দু পত্রী ১৯৯৭ সালে প্রয়াত হন, কিন্তু তাঁর সাহিত্য ও শিল্পকর্ম আজও আধুনিক বাঙালি মননে প্রাসঙ্গিক।)