নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়-হেলাল হাফিজ

কবি হেলাল হাফিজ।।

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।

সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।

যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।

 

কবিতার পটভূমি: এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়-

কবিতার এই চরণদুটি কবি হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার। এটি লিখেছিলেন ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময়। ওই সময়ে হেলাল হাফিজ পুরান ঢাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার পথে গুলিস্তানে পৌঁছানোর পর দেখেছিলেন আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বাহিনীর দমন পীড়নের নির্মম চিত্র। ওই ঘটনার সময় একজন রিকশাচালক আন্দোলনকারীদের পাল্টা লড়াইয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করে বলেছিলেন- দেশপ্রেমের জন্য হত্যা করা বৈধ।

(কবি হেলাল হাফিজের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বিশেষ ডিসকাউন্টে সংগ্রহ করতে এই লিংকে প্রবেশ করে অর্ডার দিতে পারেন।)

রিকশা চালকের এ কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে কবি লিখেছিলেন ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি। এরপর আহমদ ছফা আর হুমায়ূন কবিরকে সঙ্গে নিয়ে হেলাল হাফিজ গিয়েছিলেন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আহসান হাবীবের কাছে। কবিতাটি ছাপাবার জন্য। কিন্তু কবিতা পড়ে আহসান হাবীব বললেন, এই কবিতা ছাপা হলে রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাঁর চাকরি চলে যাবে। শুধু তাই নয়, বন্ধ হয়ে যাবে পত্রিকাটিও। তাই এই কবিতা ছাপানো সম্ভব হবে না। কারণ ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র অংশগ্রহনের আহবান জানানো হয়েছে।

কিন্তু পত্রিকায় হেলাল হাফিজের এই কবিতা ছাপা না হলেও থেমে থাকেননি বাংলা সাহিত্যের অগ্নিপুরুষ আহমদ ছফা আর হুমায়ূন কবির। কবিতার ভাষাগুলো প্রচারের জন্য এর প্রথম দুটি পঙক্তি কাগজে লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন দেওয়ালে লাগিয়ে দেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে এই কবিতা পরিবেশন করা হতো। স্বাধীনতা-পরবর্তী মুজিবী আমল থেকে দেশের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক কবিতাটি বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছিল।

পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে কবির প্রকাশিত অন্যতম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ এর মধ্যে কবিতাটি সংযোজন হয়। ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি ও হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।

 

(কবি হেলাল হাফিজের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বিশেষ ডিসকাউন্টে সংগ্রহ করতে এই লিংকে প্রবেশ করে অর্ডার দিতে পারেন।)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top