
বাণীবিতান ডেস্ক ।।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং সামরিক শাখা ইউনিট ৮২০০ বিখ্যাত তাদের অদৃশ্য নজরদারি, সাইবার যুদ্ধ এবং বিশ্বজুড়ে হাই-প্রিসিশন গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য। এই সংস্থাগুলোর দক্ষতা এতটাই উন্নত যে তারা হাজার মাইল দূরে থেকেও টার্গেট শনাক্ত করে আঘাত হানতে সক্ষম। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এদের সক্ষমতার একটি বাস্তব প্রমাণ।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাস
ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সূচনা হয়েছিল ১৯২০ এর দশকে, ব্রিটিশ শাসনামলে “শাই” নামক একটি সংস্থা দিয়ে। পরে স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সালে গঠিত হয় মোসাদ, যা এখন বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মোসাদের কাজ হলো আন্তর্জাতিক শত্রুদের নজরে রাখা এবং বিদেশে গোপনে অভিযান পরিচালনা করা
মোসাদ: ইসরায়েলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা
ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার নাম মোসাদ। এটি গঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার প্রায় দেড় বছর পর। তখন তাদের কাজ ছিল ইসরায়েলকে বাইরের হুমকি থেকে রক্ষা করা। গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমে এমন খবরও প্রচারিত হয়েছিল যে, ইসরায়েল তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর আওতায় নতুন একটি ইউনিট যুক্ত করেছে, যার নাম “ব্রাঞ্চ ৫৪”।
এই ইউনিট সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে “ব্রাঞ্চ ৫৪” দেশের সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের অধীনে কাজ করবে এবং এর দায়িত্ব হবে ইরান ও বিশেষ করে “পাসদারান-ই-ইনকিলাব” বা (ইরানি বিপ্লবী গার্ড) এর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া। এছাড়া ইউনিট ৮২০০-কে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে ধরা হয়। এই ইউনিটের মাধ্যমেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনা করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, এটি তাদের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট।
ইউনিট ৮২০০: শক্তিশালী সিগন্যাল ও সাইবার গোয়েন্দা বাহিনী
তথ্য অনুযায়ী, ইউনিট ৮২০০-তে ১০ হাজারের বেশি লোক কাজ করে এবং এখানে যারা কাজ করে তারা এলিট এবং শিক্ষিত বাহিনী থেকে বাছাই করা। এমনও বলা হয়, এই ইউনিটে কাজ করা সদস্যদের সংখ্যা মোসাদ ও শিন বেটের সদস্যদের চেয়েও বেশি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, গোয়েন্দাগিরির জন্য ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্র বানানোর দায়িত্বও ইউনিট ৮২০০-এর।
তারা তথ্য সংগ্রহ করে, তা বিশ্লেষণ করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠায়।
ইউনিট ৮২০০ ইসরায়েলের সব অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তারা সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে কাজ করে, যাতে তথ্য সংগ্রহের গতি বাড়ানো যায়।
ইউনিট ৮২০০-কে দেওয়া দায়িত্ব:
যোগাযোগ ব্যবস্থার ওয়্যারট্যাপিং (গোপনে আড়ি পাতা)।
গোয়েন্দা ও সামরিক তথ্য ডিকোড করা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
সাইবার হুমকির শনাক্তকরণ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ইলেকট্রনিক ও সাইবার ডিভাইস তৈরি করা।
প্রযুক্তির দিক থেকে ইউনিট ৮২০০-র তুলনা করা হয় বিশ্বের বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে। কারিগরি দিক থেকে একে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সমান মনে করা হয়। এমনও বলা হয়, ২০১০ সালে ইরানে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সাইবার হামলায় ইউনিট ৮২০০ জড়িত ছিল। ইরানি স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করতে স্টাক্সনেট নামে একটি ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছিল।
বলা হয়, ১৯৬৭ সালের আরব দেশগুলোর সঙ্গে হওয়া ছয় দিনের যুদ্ধে ইউনিট ৮২০০ মিসর ও সিরিয়া থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে মূল ভূমিকা রেখেছিলো। এই যুদ্ধ ইসরায়েলিদের জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।
আমেরিকান পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, হামাসের হামলার এক বছর আগে ইউনিট ৮২০০ হামাসের রেডিও পর্যবেক্ষণ বন্ধ করে দেয়। ইউনিট ৯৯০০। এই ইউনিটের দায়িত্ব হলো ছবি ও ভিডিও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। এজন্য এই ইউনিট স্যাটেলাইট, গোয়েন্দা বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে।
ইউনিট ৫০৪: ইউনিট ৫০৪ গঠন করা হয়েছে মানুষের গোয়েন্দা তথ্য (হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স) সংগ্রহের জন্য। এই ইউনিটের প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের ভেতরের হুমকিগুলো নজরে রাখা, তবে এর পাশাপাশি এই ইউনিট ইসরায়েলের সীমান্তের বাইরেও গুপ্তচর নিয়োগ করে। এই ইউনিটে কাজ করা সৈন্য ও গোয়েন্দারা গাজাসহ অন্যান্য দেশেও সক্রিয়।
ব্রাঞ্চ ৫৪
২০২৩ সালের জুনে ইসরায়েলি মিডিয়া জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে নতুন একটি গোয়েন্দা ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার কাজ হবে ইরান এবং “পাসদারান-ই-ইনকিলাব” (ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী)-এর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা শক্তির মূল ভিত্তি
ইউনিট | ভূমিকা |
---|---|
মোসাদ | আন্তর্জাতিক অপারেশন ও গুপ্তচরের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তৃতি |
8200 | সংকেত + ডিজিটাল + সাইবার গোয়েন্দা |
9900 | उपগ्रह ও ড্রোনের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল গোয়েন্দা ধারণ |
504 | মানব উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ |
54 | ইরান কেন্দ্রীক গোয়েন্দা ও যুদ্ধ প্রস্তুতি |
ইসরায়েলের গোয়েন্দা কাঠামো হচ্ছে এক শক্তিশালী, প্রযুক্তিনির্ভর ও কৌশলী একটি সার্বিক সিস্টেম। মোসাদ, Unit 8200, 9900, 504 ও Branch 54 একযোগে কাজ করে। যার ফলে তারা হাজার মাইল দূর থেকেও সুনির্দিষ্ট হুমকি শনাক্ত করে এবং প্রয়োজনে হামলা চালাতে পারে। ইরান, গাজা বা সিরিয়াতে তাদের সফল অভিযানের মাধ্যমে এই ক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তথ্যসূত্র: ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া