বাণীবিতান ডেস্ক।।
নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা। যিনি সেদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে সর্বত্র শান্তির বার্তা ছড়িয়ে ভূষিত হয়েছিলেন নোবেল পুরস্কারে। তবে লড়াই করতে গিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর নির্জন কারাগারে জীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এরপর মাত্র চার বছরের মাথায় নির্বাচিত হন দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে। নেলসন ম্যান্ডেলা বক্তা হিসেবে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
অবিসংবাদিত এই নেতা বলেছেন, আমি কালোদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি আদর্শিক গণতন্ত্র এবং মুক্ত সমাজের জন্য লড়াই করি, যেখানে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারবে। এজন্য যদি জীবন দিতেও প্রয়োজন হয়, তবুও আমি প্রস্তুত।
এই নেতা বলতেন, সম্মান দাবি করো কখনো ভিক্ষার কাজ নয়। বরং যে তোমার অস্তিত্বকেই তাচ্ছিল্য করে, তার সামনে নিজের মূল্য নষ্ট করে দাঁড়িয়ে থেকো না। দরজা বন্ধ করে দাও সশব্দে, সাহসে ও আত্মসম্মানে। মনে রেখো, তুমি কারও দয়ার পাত্র নও।
নেলসন ম্যান্ডেলার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ:
১. একাধিক নানা সমস্যা কিছু মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। আবার অন্যদের গড়ে তোলে। যে মানুষ চেষ্টা অব্যাহত রাখে, তার আত্মাকে কেটে ফেলার মতো যথেষ্ট ধারালো কোনো কুঠার নেই। তাঁর মতে, আশা’র মতো অস্ত্র যার কাছে আছে, সে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবেই।
২. শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব কাজকেই সব সময় অসম্ভব বলে মনে হয়।
৩. সময়কে সব সময় বেশি ভালোবাসতে শিখো। কারণ সে একবার চলে গেলে আর কখনো ফেরে না। ঠিক এভাবেই জীবনও থেমে থাকার নয়। প্রতিটি নিঃশ্বাসেই সময় চলে যাচ্ছে, যা আর কখনো ফিরে আসবে না। যারা শুয়ে বসে অলসতায় সময় কাটায়, তারা মৃত্যুর দিনে সবচেয়ে বেশি আফসোস করে। এমনটা তুমি করো না।
৪. বিড়াল সাদা নাকি কালো রঙের, তাতে কিছু যায় আসে না। তোমার কাজটা সফল হলেই হলো। তাই এমন পদ্ধতি বেছে নাও, যার ভেতরে সততা আছে। যার ফলাফল বাস্তব। কারণ সাফল্যের চেয়েও বড়ো সম্পদ, তোমার নীতিবোধ।
৫. পৃথিবী বদলাতে চাও? নিজেকে আগে বদলাও। অন্যের দিকে আঙুল তুলতে যাওয়ার আগে আয়নায় নিজের মুখখানা ভালো ভাবে দেখে নাও। ভেতরের গন্ধ সরিয়ে ফেলতে না পারলে বাইরের ময়লা ধুয়ে লাভ নেই। মনে রাখতে হবে, আত্মশুদ্ধিই বদলের প্রথম ধাপ।
৬. ‘বড়ো’ হওয়া মানেই সবসময় মহৎ হওয়া বুঝায় না। কারণ, পদে বড় হলেই সব সময় মনুষ্যত্ব বড় হবে, এমন কথা নাই। তাই সবসময় কাগজে ছাপা মানুষের কথায় বিশ্বাস করো না। যিনি নিঃস্বার্থভাবে তোমার পাশে থাকেন, যিনি তোমাকে ভালোবাসেন — তিনিই তোমার হিরো। হোক সে অজানা, তবু তার ভালবাসায় সত্যতা আছে।
৭. যদি তোমার বিশ্বাস সঠিক হয়, তা নিয়ে কখনো পিছিয়ে এসো না। বাতাস যেদিকে যায়, সেইদিকে দুলতে থাকলে একদিন হঠাৎ ‘ভেঙে’ পড়বে। নিজস্ব অবস্থানেই দৃঢ় থাকতে হবে। আর সেটাই আসল শক্তি।
৮. মাথা ঠান্ডা রাখো, আবেগ নয়, বুদ্ধি খরচ করো। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হৃদয়ে নয়, মস্তিষ্কে নিতে হয়। আবেগ মুহূর্তের জন্য উত্তাপ দেয়, কিন্তু দীর্ঘপথের দিশা দেয় মস্তিস্ক। আবেগকে মাঝেমধ্যে চাপা দাও, নাহলে সে তোমাকে বিপথে চালিয়ে দিতে পারে।
৯. কখনো নিজের বিশ্বাস দিয়ে যেদিকে হাওয়া, সেদিকে যেও না। যে বিশ্বাসে তুমি দাঁড়িয়ে আছো, সেটাকে বাতাসের মতো পাল্টেও ফেলো না। কারণ বিশ্বাসই মানুষকে মানুষ করে তোলে। বিশ্বাসহীন মানুষ ছায়ার মতো, যার কোনও আত্মা নেই, প্রাণ নেই।
১০. নীতির জন্য মৃত্যু হলে, সেটাই মহিমার। আমি জানতাম, আমি মরতেও পারি। তবু মাথা নোয়াইনি। আপোষ করিনি। কারণ আমি জানি, যে মৃত্যু নীতির জন্য হয় — সে মৃত্যুই ইতিহাসে বেঁচে থাকে। সে মৃত্যু বড় বিজয়।