প্রেম—যা কখনো প্রকাশ পায় না সহজে, আবার কখনো তার ভাষা হয়ে ওঠে আগুনের মতো তীব্র। জয় গোস্বামীর “সংকোচ জানাই আজ” সেই প্রেমের কবিতা, যেখানে প্রেমিকের অন্তর্দহন, লজ্জা, আকাঙ্ক্ষা আর তীব্র আত্মসমর্পণ ধরা পড়ে এক অনুপম কবি-ভাষায়।
এটি শুধু একটি কবিতা নয়—এ যেন এক আবেগের যাত্রা, যেখানে একজন পুরুষ তার প্রেমকে আর গোপনে রাখে না। সে চায় অবগাহন করতে প্রেমিকার চোখের জলে, চায় দগ্ধ চোখে এক অসমাপ্ত চুম্বনের স্নান নিতে।
এই কবিতায় প্রেম নেই শুধু ফুলে-ফুলে; আছে হাড়ের মালা, গোপন রাত, চোখের ভাষা, সভ্যতার মুখে উন্মোচনের সাহস। এমন কবিতা সহজে লেখা যায় না, সহজে বোঝাও যায় না—তবে হৃদয়ের মানুষ মাত্রই একে অনুভব করতে পারবেন।
চলুন, এই কবিতার প্রেমিক পুরুষের ডাকে সাড়া দিই—একবার মুগ্ধ হই, একবার চোখ রাখি তার দগ্ধ ডানার দিকে।
সংকোচ জানাই আজ : একবার মুগ্ধ হতে চাই
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনাে ঝর্নাজলে লুণ্ঠিত হবার –
আজ দেখি, অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে
জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো।
তােমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে বলে যে- প্রেমিক
ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যা বাগদান
হাড়ের মালার মতাে এখনাে জড়িয়ে রাখাে চুলে।
আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি
ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি ? যদি বলি
আমি সে-পুরুষ, দ্যাখাে, যার জন্য তুমি এতকাল
অক্ষত রেখেছাে ওই রােমাঞ্চিত যমুনা তােমার?
শোনো, আমি রাত্রিচর । আমি এই সভ্যতার কাছে
এখনাে গােপন করে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা ;
সমস্ত যৌবন ধরে ব্যাধিঘাের কাটেনি আমার । আমি একা
দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে,
জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোৎস্নার ধারণা দেবাে বলে
এখনাে রাত্রির এই মরুভূমি জাগিয়ে রেখেছি।
দ্যাখাে, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালাে সংকেত –
যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করাে বধির কবিকে ;
সে যদি সংকোচ করে, তবে লােকসমক্ষে দাঁড়িয়ে
তাকে অন্ধ করাে, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তােমার
পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি
সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে
উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছাে প্রকাশ্য ঝর্ণায়!