আকাশের চিঠি

 

বন্ধু আকাশ !

ছোটবেলায় সেই যে তোর সঙ্গে রোজ আকাশ দেখতাম, মনে আছে তোর? আমার মনে পড়ে সব।

পড়ন্ত বেলায় বিশখালী নদীর ধার।  নির্জন প্রান্তর।  আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।  সবকিছু তোর সঙ্গেই দেখা।  তুই চলে যাওয়ার পর  ভেতরে আমি সেই যে একা হয়ে পড়েছি।  এ জীবনে আর সেই শূন্যতা কাটাতে পারেনি কেউ।  ধরতে পারো ঢাকা কিংবা তোদের কোলকাতা শহরের মতো।  লাখো মানুষ।  লাখো গাড়ি-বাড়ি।  কিন্তু একটিও আমার নয়।  আমিই শুধু আমার।

আমার দুশ্চিন্তা, আমার সংকট, আমার দু:খবোধ, আমার ক্লান্তি, হিংসা-ঘৃণা এগুলোই এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।  পাহাড়সম এসব ক্লিষ্ট আমাকে আর মাথা জাগাতে দেয় না।  তাই আকাশ দেখাও হয় না।

জীবনের প্রয়োজনে এখন ব্যস্ততাই আমার সঙ্গী।  কখনো চাকরি।  চাকরির বাইরে উপার্জনের চেষ্টা।  পরিবারের জন্য সময়।  সবকিছু মিলে কাজের অবসর নেই আমার।  মাঝে মাঝে সময়ের ফাঁকে নদী দেখতে যাই এক জায়গায়।  কিন্তু সেখানে প্রকৃতি নেই।  প্রকৃতি বলতে নদীর পানিটুকুই।  এছাড়া চারপাশে বাণিজ্যিক পরিবেশ।  নানা রকমের দোকানপাট, খাবারের গন্ধ, অসংখ্য ক্রেতার আনাগোনা।  বিক্রেতার হাঁক-ডাক।

তাই শহরের আশপাশে দুএকটা নদী থাকলেও তাতে বৈচিত্র্য নেই।  আছে বিজনেস।  এ নদীর তীরে গেলে উদার হতে গান আসে না।  হৃদয় ভরে না।  শুধু খানিকটা চোখ জুড়ায়।  লাল-নীল বাতি।  পোশাকি মানুষের ভিড়।  লঞ্চ-স্টিমার ও মাছধরা ট্রলারের  চলাচলের শব্দ।

জানিস, তোকে এখনো যখন নদীর ধারে গিয়ে ছবি তুলতে দেখি, তখন আমার ভালো লাগে।  মনে পড়ে সেই নদী, সেই সবুজে ভরা ঝোপঝাড়।  সন্ধ্যার আকাশে উড়ে চলা পাখির দল।  এসব নিয়েই আছি।

অনেক লিখলাম, সময় নিয়ে তুইও লিখিস।  তবে তুই একটু বড় চিঠি লিখিস।  আমার পড়তে ভালো লাগে।  তোর মতো আমার ভাষাজ্ঞান নেই।  যা দিয়ে আমার সব ব্যাকুলতা ফুটিয়ে তুলতে পারি।  তুই আবার লিখিস- বন্ধুর কোনো জাত নেই, নেই কোনো বয়স।  বন্ধু বন্ধুই।  শুকনো পাতার বুকে যে রসালো চুম্বন দিতে শিখায়, সেই তো প্রকৃত বন্ধু !

ভালো থাকিস, পারলে লিখিস

ইতি..

বিপ্লব রায়
নিউ হাউজ রোড, 
বরিশাল,০৮-১২-২০২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top