
—সাজেদ রহমান ।।
কত ধানে কত চাল হয়, মদন মণ্ডল তা ভাল করেই জানত। সমস্তটা জীবন তো সে এক রকম হিসেব করতে করতেই কাটিয়ে দিল। কিন্তু কতটা চাল সেদ্ধ করলে কতটা ভাত হয় এবং কতটুকু ভাত খেলে একটা মানুষের পেট ভরে তার হিসেব সে জানত না। মদন মণ্ডল চাষী। বাংলার চাষী। ছয় বিঘে জমির মালিক সে। তা ছাড়া, ঘরের সামনেও আধ বিঘের মত জমি আছে। তাতে লাউ কুমড়ো এবং বেগুন জন্মায় প্রতি বছর। মোট ফসলের যোগফল থেকে দু-তিনজনের সংসার মোটামুটিভাবে চলে যাওয়া উচিত ছিল। তা চলেনি। কোনদিনও চলেনি। কত সরকার চলে গেল, কিন্তু মদন মণ্ডলের পেটের খিদে গেল না।
গত তিরিশ বছরের চেষ্টায় সে তিরিশের বেশি গুনতে শিখল না। শিখল না মানুষকে অবিশ্বাস করতে। মহাজন গদাই মোড়ল তার ফসল সব কিনে নেয়। লাউ-কুমড়োগুলো সাবালক হওয়ার আগেই সে দাদন দিয়ে আসে গদাই মোড়লের কাছ থেকে। একশ’ টাকার জিনিস তাকে বেচতে হয় চল্লিশ টাকায়। সে শুনেছে, ঢাকায় সবজির দাম কম। তাই মহাজন তার কাছ থেকে কম টাকায় সবজি কেনে। সব জিনিষের দাম বাড়ল অনেক, অথচ তার আয় বাড়ল না তিরিশ টাকার বেশি। তবুও মহাজন গদাই মোড়লকে সে অবিশ্বাস করতে পারল না। অবিশ্বাস করতে শেখেনি বংশীপুরের মদন মণ্ডল।
ঘরে বউ নেই, মারা গেছে প্রায় দশ বছর আগে। গেছে নবীনের জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। মদনের একমাত্র সন্তান নবীন। বংশীপুরের পাঠশালায় সে বার পাঁচেক ভর্তি হয়েছে, কিন্তু একসঙ্গে সে ছ মাসও পড়তে পারেনি। মাইনে যোগাড় হয় না বলে নবীনের নাম কাটা যায় স্কুল থেকে। নবীন পড়তে চায়। লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক তার খুব বেশি। নাম কাটা গেলে কি হবে, নবীন এক থেকে একশ’ পর্যন্ত গুনতে পারে। গুনতে পারে লাউ-কুমড়োর মোট সংখ্যা।
ঢাকা থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে বংশীপুর গ্রাম। পাকা রাস্তা। এ অঞ্চলের সব সবজি নিয়ে যায় গদাই মোড়ল ঢাকায়।
নবীন কেবল একশ’ পর্যন্ত গুনতেই পারে না, সে যোগ-বিয়োগ শিখেছে। শিখেছে পাঠশালার বাইরে। গদাই মোড়লের ছেলে ফারুক তার সহপাঠী ছিল। ছুটির সময় নবীন পাঠশালার বাইরে অপেক্ষা করত ফারুকের জন্যে। দুজনে এসে বসত একটা গাছের তলায়। ফারুকের কাছে সে শিখে নিলে যোগ-বিয়োগের জটিল কৌশল।
একদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে নবীন বললে, বাবা, চল আমরা একবার ঢাকা যাই। তুমি তো আজও ঢাকা শহর দেখনি। না, দেখিনি। ঢাকা যেতে ভাড়া লাগে। তিরিশ বছর আগেও লাগত। ভাড়া তখন কমই ছিল।
নবীন চুপ করে রইল। কি যেন সে হিসেব করছিল। একটু পর সে বললে, প্রত্যেক বছরে তুমি যদি সোয়া কিলোমিটার করে পথ হাঁটতে, তবে তিরিশ বছর লাগত তোমার ঢাকা পৌঁছাতে। তিরিশ বছর হলেও এতদিনে তুমি পৌঁছুতে পারতে। ঘুমোবার সময় অঙ্ক কেন নবীন? তোমার একবার ঢাকা যাওয়া দরকার। কেন রে ? গদাই মোড়ল তোমায় ঠকাচ্ছে। সে দালাল। ‘দালাল নয়, মহাজন। শুধরে দিল মদন মণ্ডল।
মহাজন হ’লেও গদাই মোড়ল দালাল। ঢাকায় গিয়ে দেখে এস, তোমার দু’ ৪০ টাকার কুমড়ো সে ১০০ টাকায় বিক্রি করে ৷
বলিস কি নবীন, ১০০ টাকা ! বিছানায় উঠে বসল মদন মণ্ডল। ছেলের কাছে একটু সরে গিয়ে খুব নীচু স্বরে বললে, এমন কথা মুখে আনিস নে নবীন। গাঁয়ের ছোড়ারা তোকে মিছে কথা বলেছে। গদাই মোড়ল আমার তিরিশ বছরের মহাজন। সে আমায় কিছুতেই ঠকাবে না৷ তিরিশ বছর ধরেই ঠকাচ্ছে সে।
নবীন যখন জন্মায়, মদন মণ্ডল তখন গদাই মোড়লের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। বিপদ-আপদের সময় হাত পাতলে গদাই মোড়ল কোনদিনই তাকে ফিরিয়ে দিত না। কিন্তু ঋণের টাকা আর ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় নি।
সেদিন গদাই মোড়ল এল মদনের ঘরের সামনে। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল আধ বিঘের বাগান। কুমড়োগুলো প্রায় পেকে এসেছে। লাউগুলোয় নখ বসিয়ে গদাই মোড়ল দেখলে, হ্যাঁ, লাউগুলো কচিই বটে। দু-চারদিনের মধ্যেই ঢাকায় চালান দেওয়া দরকার। শহরের ভদ্রলোকেরা লাউয়ের গায়ে নখ বসিয়ে পরীক্ষা করে তবে লাউ কেনেন। লাউ-চিংড়ির তরকারিতে বিচি থাকলে চলবে কেন? গদাই মোড়ল আজ এসেছে দরাদরি করতে নয়, ঋণের টাকাটা মদন মণ্ডলকে স্মরণ করিয়ে দিতে। ফসল তোলবার আগে সে প্রতিবারই স্মরণ করিয়ে দেয়।
চলে যাবার আগে গদাই মোড়ল জিজ্ঞাসা করল আবার, মাচার ওপর কটা কুমড়ো আছে রে ?
তুমি তো পাইকারি দরে কিনবে, গুনে লাভ কি মোড়ল সাহেব ? পাইকারি কিনলেও মোট সংখ্যা তো একটা থাকা চাই। ক’টা হবে, এই ধর, বিশ-বাইশটা।
হ্যাঁ, তুই ঠিক বলেছিস মদন। বাইশটা নয়, বিশটাই হবে। গদাই মোড়ল পকেট থেকে তিনটা পঞ্চাশ টাকার দুটো নোট বার করে তুলে ধরল মদনের দিকে। তারপর বললে, কাল সকালে আমার লোক আসবে, লাউ-কুমড়োগুলো দিয়ে দিস। চল, তোর ঘরটা একবার দেখে আসি।
ঘর ? ঘর দেখলে কোথায় ?-জিজ্ঞাসা করল মদন।
কেন, তোর ঘরটা উবে গেল না কি ?
ওটা কি আর ঘর মোড়ল সাহেব ! কোন রকমে ছেলেটাকে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়ে থাকি। তোমার মত ধনী মহাজনরা ওসব জায়গায় দু দণ্ড দাড়াতেও পারবে না ।
দাড়াব না, একবার উকি দিয়ে দেখে আসব…দু-একটা লাউ-কুমড়ো ছেলেটা তোর পেড়ে নিয়ে যায় নি তো ?—গদাই মোড়ল পা বাড়াল যাওয়ার জন্যে। মাচার পিছন থেকে বেরিয়ে এল নবীন। বললে, দাম যা দিলে, তাতে বিশটা কুমড়োই পাবে।
গদাই মোড়ল অবাক হয়ে চেয়ে রইল নবীনের মুখের দিকে। সে জিজ্ঞাসা করলে, বিশটা কেন ?
নবীন জবাব দিলে, তুমি তো বললে, মাচার ওপর বিশটা কুমড়ো আছে ! ক’টা আছে বলে তোর মনে হয় ?-সাতচল্লিশটা।
কতর পিঠে কত দিলে সাতচল্লিশ হয় রে পুঁচকে ছোড়া ? চারের পিঠে সাত।
বটে! বংশীপুরের পাঠশালায় অনেক লেখাপড়া শিখেছিস দেখছি? পাঠশালার টিনগুলো এবার খুলে নিয়ে আসব। পণ্ডিত ব্যাটা আজও আমার একটা টাকাও শোধ দেয় নি। এসব বড় বড় অঙ্ক কোথায় শিখলি রে নবীন ?
শিখলাম ফারুকের কাছে। সে তো গুণ-ভাগ সব শিখে ফেলেছে। বাবাকে ঠকিয়ে ঠকিয়ে তুমি যে আমাদের সর্বনাশ করছ, ফারুকও তা জানে।
শুনলি মদন ? ছোড়া কি লঙ্কা বাটা খেয়েছে নাকি ? মুখে অত ঝাল কেন ? বলি ও মদন, চারের পিঠে সাত দিলে যে সাতচল্লিশ হয় তাও তুই বিশ্বাস করবি নাকি ?
মদন মণ্ডল মাথা নেড়ে বললে, তা কখনও হয় মোড়ল সাহেব! তুমি কখনও মিথ্যে বলবে না। বলতে পার না। নবীন জন্মেছে দশ বছর আগে,
আর তোমার সঙ্গে আমার কারবার চলছে তিরিশ বছর হ’ল। তিরিশ বছরের বিশ্বাস নবীন কি ক’রে উল্টে দেবে ?
নামাজ পড়বার সময় হ’ল, এবার আমি চলি মদন।
নবীন বললে, বাবা, চল একবার ঢাকা যাই। ফারুকের বড় স্কুলটাও দেখে আসব, আর—। নবীন হঠাৎ থেমে গেল। আর কি ?—জিজ্ঞাসা করল মদন। আর বাজারে গিয়ে দেখে আসব লাউ-কুমড়োর দর। তেমন একটা ইচ্ছে মদনেরও ছিল। আজ ক’দিন থেকে ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছেটা ওকে পীড়া দিচ্ছিল খুব। ঢাকার বাজারে লাউ-কুমড়োর দর দেখতে গিয়ে গদাই মোড়ল যদি ধরা পড়ে ? কি দরকার তার ঢাকায় গিয়ে অবিশ্বাসের বিষ নিয়ে আসবার ? সে চাষী, মাটির বাইরে তার দৃষ্টি দেওয়া উচিত নয় ৷
শেষ পর্যন্ত নবীন তার বাবাকে ছাড়ল না। একদিন তাই মদন মণ্ডল রেলগাড়িতে টিকিট কেটে নবীনকে নিয়ে চেপে বসল। টিকিটের লোকসান আজ আর লোকসান বলে মনে হ’ল না মদনের। কারোরই হয় না। সত্যদর্শনের জন্য মানুষ জীবন দেয়। মদন মণ্ডল দিচ্ছে কেবল টিকিটের দাম । এ লোকসান সে নিজে না পারুক, নবীন একদিন পুষিয়ে দেবেই । আগামী দিনের যুবক নবীন হয়ে উঠবে গত পাঁচ হাজার বছরের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। সে ঠকবে না, সে অস্বীকার করবে গদাই মোড়লের মহাজনী শোষণ-কর্তৃত্বকে। ঢাকার বাজারে দাড়িয়ে সে সত্য দর্শন করবে। নবীন অঙ্ক কষতে জানে ৷ যোগ-বিয়োগের সীমা ছাড়িয়ে সে গুণ-ভাগের চূড়ায় গিয়ে উঠতে শিখেছে। সে ছুটেছে শহরের বাজারে। বাজার-সভ্যতার শহরে চলেছে বংশীপুরের মদন মণ্ডল। কমলাপুর স্টেশনের বাইরে এসে ওরা চুপ ক’রে দাড়িয়ে রইল। যন্ত্র- সভ্যতার বিস্ময় ওদের বিচলিত করল না মুহূর্তের জন্যে। ওরা বিস্মিত হতে আসে নি। ওরা এসেছে সত্য দর্শন করতে। দেখতে এসেছে গদাই মোড়লের গোপন চেহারা। মানুষের ভিড় তাই ওদের গায়ে লাগল না। কারও দিকে চেয়ে দেখবার সময় নেই ওদের। নবীন জিজ্ঞাসা করলে, বাজার কোন্ দিকে বাবা ? মনে হচ্ছে স্টেশন থেকেই বাজারের শুরু-জবাব দিল মদন।
লাউ-কুমড়ো কই ?—নবীন চেয়ে রইল মদনের দিকে। ট্রাফিক পুলিশকে মদন মণ্ডল বললে, আমরা এসেছি বংশীপুর থেকে, মাদারীপুর জেলা। আমরা এসেছি ঢাকার বাজার দেখতে। বাজার ?—ধমকে উঠল ট্রাফিক পুলিশ, কোন্ বাজার ? নবীন বললে, যেখানে আমাদের লাউ-কুমড়ো বিক্রি হয় ৷ ধৈর্য হারিয়ে ফেলল ট্রাফিক পুলিশ। ধৈর্য হারিয়ে দুজনে দুটো সিগারেট ধরিয়ে গোটা পাঁচেক টান মারল পর পর। কমলাপুর স্টেশনে ওরা অনেক রকমের আহাম্মক দেখেছে, কিন্তু সামনে দাঁড়ানো এমন আহাম্মক ওরা এই প্রথম দেখল। সরকারি দাদনের সুবিধে না দেখে এরা দেখতে চাইছে লাউ-কুমড়ো! একাবিংশ শতাব্দিতে বাপ-ব্যাটাতে মিলে কমলাপুর স্টেশনে খুঁজে বেড়াচ্ছে লাউ-কুমড়োর বাজার! নবীন বললে, বাবা, চল আমরা ফিরে যাই। ট্রাফিক পুলিশ একজন মদনের আগেই বলে বসল, যাবে কেন, লাউ-কুমড়ো খেয়ে যাও ৷ আমরা লাউ-কুমড়ো খাই না, বেচি।—জবাব দিল নবীন। তাই নাকি ? কমলাপুর বাজারে তাই এক ফালি কুমড়োর দাম ৪০ টাকা। কোন্ বাজারে বললেন স্যার ?—জানতে চাইল মদন মণ্ডল। কাচা বাজারে। ওই তো সামনেই, নাক বরাবর চলে যাও। একটু পরে বাপ-ব্যাটাতে মিলে চলতে লাগল নাক বরাবর। মদনের একটা হাত চেপে ধরে নবীন বললে, বাবা, বড্ড ভয় করছে। কেন রে ? যদি আমরা হারিয়ে যাই ?―নবীন মদনের হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরল। কিন্তু একবার যখন শহরের রাস্তায় নেমে পড়েছে, তখন নবীনকে এ হাত একদিন ছেড়ে দিতেই হবে। একালের একটা শতাব্দীও পারছে না গত পাঁচ হাজার বছরের হাতটাকে ধরে রাখতে। ধরে রাখতে চায়ও না ৷
ভিড়ের পেছনে পেছনে কোন রকমে রাস্তা পার হয়ে ওরা পৌঁছে গেল কাঁচা বাজারে। এক মিনিটের জন্যেও নবীনের মুঠো আলগা হল না। কেঁচোর মত লেপ্টে রইল মদনের গায়ের সঙ্গে। কিন্তু মদন ক্রমশই বিচলিত হয়ে উঠছে। দোকানীকে সে জিজ্ঞাসা করলে, এই এক ফালি কুমড়োর দাম কত ? ৪০ টাকা। ৪০ টাকা ! গোটা কুমড়োটার দাম ?
সাইজ অনুযায়ী দেড় থেকে দুশ’ টাকা।
মদন মণ্ডল এবার কাটা কইমাছের মত ছটফট করতে লাগল। তার তিরিশ বছরের বিশ্বাসের কুমড়োটাকে বুঝি কেউ আর বাঁচিয়ে রাখতে পারল না। ক্রমে ক্রমে সেটা ফালি হতে লাগল। দু-দশটা নয়, দু-চার হাজার ফালি। দোকানীদের বঁটিগুলো ধারের আভিজাত্যে জেল্লা মারছে খুব। মদন মণ্ডল পরখ করে দেখলে, একটা কুমড়োর বোটার চার দিকে লাল পদ্মর ছাপ রয়েছে। সে জিজ্ঞাসা করলে, এক ফালি কুমড়োর এত দাম কেন ? এ যে খুব ভাল জাতের কুমড়ো গো-জবাব দিল দোকানী।
নবীনের দৃষ্টিতে জয়ের আড়ম্বর। কিন্তু মদন চাইতে পারল না নবীনের চোখের দিকে। পা দুটো যেন তার কাঁপছে। রাগে নয়, লজ্জায়। বাংলার
চাষী রাগ করতে পারে না, পারে ক্ষমা করতে। গদাই মোড়লকেও সে ক্ষমা করবে। কিন্তু—মদন মণ্ডল হঠাৎ দেখতে পেল, একটু দূরেই গদাই মোড়ল পাইকারদের হাত থেকে টাকা নিচ্ছে। অনেক টাকা। সে ডাকলে, মোড়ল সাহেব- গদাই মোড়ল টাকার বাণ্ডিলটা পকেটে রেখে মুখ ঘুরিয়ে দেখলে, মদন আর নবীন এগিয়ে আসছে তারই দিকে।
গদাই মোড়ল আর অপেক্ষা করতে পারল না। সে উল্টো দিকে পা বাড়াল ৷ পেছন থেকেই মদন মণ্ডল চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, টাকা আমি চাই নে মোড়ল সাহেব। একটা কথা তোমায় জিজ্ঞাসা করব।
এ শতাব্দী মদন মণ্ডলের কোনও কথাই শুনতে আর রাজী নয়। শুনতে গেলেই ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝখানে সভ্যতা-দালালটি ধরা পড়বে। মদন মণ্ডল এসব কথা বুঝতে পারে না। সে ছুটল গদাই মোড়লের পিছু পিছু দোকানদারদের মধ্যে কলরব উঠল। ভয় পেয়ে নবীনও ছুটল মদনের দিকে। কেঁদে উঠল নবীন, বাবা, আমাকে ফেলে কোথায় যাচ্ছ ? এ প্রশ্নের জবাব মদন আর দিতে পারল না। সে তখন রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে, বাজারের বাইরে। মদন দেখেছে, গদাই মোড়ল তার পকেটটা চেপে ধরে রাস্তা পার হয়ে গেল। প্রধান রাস্তা। মদন মণ্ডল ছুটল সেই রাস্তা দিয়েই। গেল, গেল, গেল—চেঁচিয়ে উঠল শহরের বাবুরা ৷ মদন মণ্ডল সত্যিই গেল। সে যাচ্ছিল অনেক দিন আগে থেকেই। মদনের দেহটা দু-ফালি কুমড়োর মত পড়ে রইল ট্রাক চাপায় রাস্তায়। ওতে লাল পদ্মের ছাপ নেই, আছে রক্ত। গঙ্গা-যমুনার জলের মত রক্তের স্রোতও গতিশীল।