
শোনো ধর্মান্ধ, আমি তোমার মতন ধার্মিক নই”
ধর্মান্ধ জিজ্ঞাসা করলেন:- আপনি কি ধার্মিক?
আমি বললাম:- হ্যাঁ, আমি ধার্মিক, কিন্তু তোমার মতন নই৷
ধর্মান্ধ বললেন:- আমার মতন নয় মানে? আপনি আসলে’ই ধর্ম মানেন কিনা, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
আমি বললাম:- পৃথিবীতে বহু ধর্ম বিদ্যমান তন্মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট এসকল ধর্মকে অনেক বড় ধর্ম বলা হয়, মূলত: আমি উল্লেখ্য ধর্ম সমূহের মর্মভেদ জেনেই নিজেকে ধার্মিক দাবি করছি।
আমি যদি ধর্মে বিশ্বাসী না হতাম, তবে আমি নিজেকে কখনো’ই ধার্মিক দাবি করতাম না৷
ধর্মান্ধ বললেন:- আপনি কেন আমার মতন ধার্মিক নয়?
আমি বললাম:- শুরুতে’ই আমি যখন নিজেকে ধার্মিক দাবি করিনি, তখন আমি মূলত: বুঝতে চেয়েছিলাম ধার্মিক বলতে কী বোঝায়?
আমি যখন বুঝলাম, ধার্মিক বলতে জড়তা মুক্ত জীবন এবং সৎ-সুন্দর ও মঙ্গলময় পথে পরিচালিত হওয়াকে’ই ধার্মিক বুঝায়, তখন থেকে’ই আমি নিজেকে ধার্মিক দাবি করতে শুরু করেছি৷
ধর্মান্ধ বললেন:- আমি তো এর ব্যাতিক্রম নয়? আমিও তো বুঝি সৎ-সুন্দর পথে পরিচালিত হওয়াই ধার্মিকতা।
আমি বললাম:- তুমি এটা মেনে নিয়েছো তো? খুব সুন্দর কথা, কিন্তু আমি বলছি তুমি এটি তোমার ভিতর থেকে মেনে নিতে পারোনি৷
ধর্মান্ধ বললেন:- আপনি কি করে জোর দিয়ে বলছেন আমি এটি মেনে নিতে পারিনি? আমি অবশ্যই মেনে নিয়েছি কারণ আমিও একজন ধার্মিক।
আমি বললাম:- তুমি ইসলাম ধর্মের মুসলিম, এবং তোমার নিকট শুধু মাত্র মুসলিমরা’ই ধার্মিক।
কোনো হিন্দু বা কোনো বৌদ্ধ, কোনো খ্রিস্টান তোমার চোখে ধার্মিক নয়, তোমার বিশ্বাস মুসলিম ছাড়া অন্য কোনো জাতি আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত নয়।
তুমি বিশ্বাস করো একমাত্র মুসলিমরা’ই খাঁটি ও ধার্মিক,
অন্য ধর্মের কেহ খাঁটি নয়, এবং ধার্মিকও নয়৷
তুমি বিশ্বাস করো আল্লাহ শুধু মাত্র মুসলিমদের জন্য জান্নাত রেখেছেন, আর অন্য ধর্মের মানুষের জন্য জাহান্নাম।
ধর্মান্ধ বললেন:- হ্যাঁ, আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম, এবং আমি মুসলিম হিসেবে এটা আমাকে বিশ্বাস করতে’ই হবে৷
আমি বললাম:- এখানে’ই আমি তোমার মতন ধার্মিক নই।
ধার্মিক বলতে যদি জড়তা মুক্ত জীবন, সৎ-সুন্দর ও মঙ্গলময় পথ’কে বুঝানো হয়,”নির্যাস অংশ”।
তা হলে আমি ধার্মিক বলতে শুধু মুসলিমদের কেন বুঝবো? যারা’ই জড়তা মুক্ত, সৎ-সুন্দর ও মঙ্গলময় পথ অবলম্বন করেন তাদেরকে’ই তো ধার্মিক বলার কথা? এখানে শুধু মুসলিম, শুধু হিন্দু, শুধু বৌদ্ধ, শুধু খ্রিস্টান নাম আসবে কেন? ধার্মিকতার মানে তো এসব নাম নয়?
ধর্মান্ধ বললেন:- এসব নামের মাঝে’ই তো ধার্মিকতা পাওয়া যায়!
আমি বললাম:- এসকল নামের মাঝে শুধু ধর্মান্ধ পাওয়া যায়, কিন্তু ধার্মিক পাওয়া যায় না, ধার্মিক হওয়া এবং ধর্মান্ধ হওয়া এক বিষয় নয়৷
ধর্মান্ধ বললেন:- আপনি কেন বার বার আমাকে ধর্মান্ধ বলছেন? আমি তো ধার্মিক?
আমি বললাম:- তুমি যদি ধার্মিক হও, তবে আমাকে এখন’ই জানাও, একজন ইয়াহুদীর জন্য, একজন বৌদ্ধর জন্য, একজন হিন্দু এবং একজন খ্রিস্টানের জন্যও আল্লাহ জান্নাত রখেছেন তুমি এটি কতটুকু মেনে নিতে পারো?
ধর্মান্ধ বললেন:- আমার জানামতে মুসলিম না হয়ে কেহ মৃত্যুবরণ করলে তার জন্য আল্লাহর পক্ষথেকে ভয়ংকর আজাব রয়েছে। তাই আমি বলতে’ই পারি যারা অমুসলিম তাঁরা জাহান্নামে যাবেন, এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই৷
আমি বললাম:-শোনো, তুমি যদি একবার সকল ধর্ম মতকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে নিতে পারো, তখন তুমি দেখবে প্রতিটি ধর্মই যথাযথ ভাবে নিজ মহিমা প্রকাশ করে চলছেন৷
কিন্তু তুমি যদি শুধুমাত্র তোমার ধর্মকে’ই এককভাবে বড় করে দেখতে থাকো, তখন তুমি’ই তোমার ধর্মের গোঁড়া শত্রুরূপে প্রকাশিত হবে, যাকে আমি ধর্মান্ধ বলছি৷
তুমি যদি তোমার ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কেও নিগুঢ় ভাবে বুঝতে পারো, তখন তুমিও সকল ধর্মেরনামে গোঁড়ামির প্রতিবাদ করবে’ই করবে৷
মনে রাখবে, ধর্মের মাঝে অন্ধত্বভাবে যারা ধর্ম পালন করছেন, তাঁরা’ই ধর্মের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে বসে আছেন৷
ধর্মের সারাংশ না যেনে ধর্ম নামে গোঁড়ামি করা মানুষেরা’ই একটি সুন্দর ধর্মকে জঘন্য করতে যথেষ্ট।
যদি কেহ ধর্মের মূলে প্রবেশ না করে, শুধু মাত্র ক্রীতদাসের মতন ভালো মন্দ না দেখে’ই বিশ্বাস অযুহাতে অন্ধ পূজা করতে’ই থাকে, তখন’ই একটি কট্টর ধর্মান্ধের জন্ম হয়।
ধর্মান্ধ বললেন:- ধর্ম বুঝতে কি নিজ ধর্ম যথেষ্ট নয়?
আমি বললাম:- তোমার ধর্ম বোধ তখন’ই যথেষ্ট,যখন তুমি তোমার ধর্ম সহ অন্যান্য ধর্মকেও প্রভাবিত করতে পারবে, তবে’ই তুমি তোমার ধর্ম বুঝকে যথেষ্ট মনে করতে পারো।
কিন্তু যদি তোমার ধর্ম থেকে’ই তোমাকে ধর্ম বুঝ ক্রীতদাসে পরিনত করে, তবে তার অবশ্য’ই ধর্মহীন হয়ে থাকা’ই অনেক ভালো, তখন অন্তত ধার্মিক পরিচয়ে তোমার দ্বারা কোনো ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হবেনা।
যদি তুমি ধর্মের মান রক্ষা করতে চাও, তবে তোমাকে ধার্মিক হতে’ই হবে, কোনো ধর্মান্ধ নয়৷
-বুদ্ধ মুহাম্মদ কৃষ্ণ
প্রিয় পাঠক, লালন দর্শন সম্পর্কে আরো জানতে এই লিংকে প্রবেশ করে বিশেষ হ্রাসকৃত দামে বই সংগ্রহ করতে পারেন
(লেখাটি ফেসবুক পেইজ ‘ লালন দর্শন’ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)