গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলার-

অনির্বাণ ভট্টাচার্য
কবি ও অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য

।। অনির্বাণ ভট্টাচার্য।।

চরাচর জুড়ে হনন কমেছে বটে
হননের ছ্যাটা কমাতে মোটেই পারনি।
সাজতে সাজাতে মশগুল তুমি এমনই
অবচেতনেও সে শবের ধার ধারনি
হন্তারকের চাকরি কেড়ে নিয়ে
তুমি ভেবেছিলে কালো রাত বুঝি কাটল
জানতে পারনি ভোরের আলোর আগে
যে কটি মানুষ শকুনের মত হাঁটল
আমার পিপাসা মিটিয়ে ফেলবে তুমি
এমন ক্ষমতা কবে অর্জন করেছ।

শুধু জেনেছিলে খুনের বদলা খুন
সেই ভরসায় ভোটগুলো মুখে পুরেছ।
তুমি তো জানতে একদিন এই চুল্লি
খিল্লির মতো হররা শব্দে হুট করে খুলে যাবে

তুমি তো জানতে আমার এই অবসাদ হে নিষাদ বলে চিৎকার করে তোমাকেই গিলে খাবে
তুমি তো জানতে তোমার দেশের আংশিক, অনাবিল খুন ছাড়া আর কোনও কিছু চায়নি
তুমি তো জানতে অ্যাডলফ পুড়ে গেলেও হিটলার আজও পুড়ে ছাই হয়ে যায়নি।

তুমি কোনও দিন কিছু বলনি
তুমি সব চাপা দিয়ে রেখেছ
যত ছাই গাদা যত তুষানল উৎসব দিয়ে ঢেকেছ।

এখনও সময় আছে, তুমি নত হও
হও জোড় হাত বাবরের মত
এখনও প্রকৃত প্রলেপে সেরে যেতে পারে বহু ক্ষত
নয়ত দেরি হয়ে যাবে আরও।

সব চেষ্টাই হবে ছাড়খাড়
স্নিগ্ধ সকালে রাজদ্বার খুলে
পিছুটি মুছলে দেখবে তোমার বানানো
গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলার
সেই সঙ্গে দিল্লির কবি আমির আজিজের সব ইয়াদ রাখা যায়েগার অনুবাদ কবিতাও পড়ে শোনালেন তিনি।
সব মনে রাখা হবে
সব কিছু মনে রাখা হবে
তোমাদের লাঠি আর গুলিতে মড়েছে আমার যে সাথীরা,
তাদের স্মৃতি বুকে ভরে মন খারাপেই থাকা হবে।
সব মনে রাখা হবে। সব কিছু মনে রাখা হবে।

তোমরা ক্ষমতার জোরে মিথ্যে লিখবে জানি
প্রয়োজন হলে তেমন, নিজের রক্ত দিয়েই না হয় সত্যিগুলো ঠিক লিখে রাখা হবে
সব মনে রাখা হবে। সব কিছু মনে রাখা হবে
মোবাইল, ইন্টারনেট, টেলিফোন বন্ধ করে

অমানিশা আর শৈত্যে মোড়া শহরকে অন্ধ করে হাতুরি হাতে আচম্বিতে আমার ঘরে ঢুকে আসা
আমার অল্পের চেয়েও ছোট্ট জীবনকে ভাঙার পরেও আমার সহায় সম্পদহীন হৃদয়কে চৌরাস্তায় মারার পরেও,

উদাসীন ভিড়ে দাঁড়িয়ে তোমার মুচকি হাসা, সব মনে রাখা হবে। সব কিছু মনে রাখা হবে।
দিনের বেলায় মধুর ভাষণ পোড় খাওয়া
সব ঠিক আছে বলতে গিয়ে পিছলে যাওয়া
রাত্রি হলেই অধিকার দাবিতে গুলি আর লাঠির বারি
যাদের গায়ে আঘাত চিহ্ন তাদেরই বলা বদমাইশ এর ধারি।

সব মনে রাখা হবে। সব কিছু মনে রাখা হবে।
এও মনে রাখা হবে কোন কোন পথে তুমি ভাঙতে চেয়েছ দেশ,
মনে রাখা হবে বার বার সেই ভাঙন ঠেকানো হয়ে উঠেছিল আমাদের অভ্যেস।
জগৎ সমুখে ভীরুর যেদিন পরিমাপ করা হবে তোমার নাম মনে রাখা হবে।
সেই জগতেরই সভায় যেদিন জীবন বোঝানো হবে
আমাদের নাম মনে রাখা হবে যে, কেউ কেউ ছিল যাদের প্রয়াস হাতুরির ঘায়ে ভাঙেনি।
কেউ কেউ ছিল মহাজন পুঁজি যাদের কিনতে পারেনি
কেউ কেউ ছিল ঝড়ের পরেও লড়াইয়ে হয়নি ক্ষান্ত।

নিজ মৃতদেহ দেখার পরেও কেউ কেউ ছিল জ্যান্ত।
চোখের পাতা ঘুমের মন্ত্র হয়ত ভুলতে পারে এই পৃথিবীটা কক্ষপথ ও গুলিয়ে ফেলতে পারে
তবু আমাদের কাটা ডানা ঝাঁপটিয়ে ওড়ার চেষ্টা
আমাদের ভাঙা গলার চিৎকার ও তেষ্টা মনে রাখা হবে।

তুমি রাত লিখো, আমি চাঁদ লিখব
তুমি জেল ভর আমি রেওয়াল লিখব
তুমি এফআইআর লেখ, আমি কবিতা লিখব
তুমি বরং খুন করে দাও আমাকে
আমি প্রেত হয়ে সেই খুনের বয়ান লিখে ফেরত পাঠাব তোমাকে।

তুমি আদালতে বসে চুটকি লেখো
আমি রাজপথে সব ঘটনা লিখব।
এত জোরে বলবো- বধিরও শুনতে পাবে

এমনই স্পষ্ট লিখব দৃষ্টিহীনেরা দেখতে পাবে
তুমি পদ্মে ছেটাও কালো
আমার গোলাপের রং লাল
তুমি শোষণে খুবই ভালো কিন্তু আকাশের যে আলো তাতে ইনকিলাব লেখা থাকবে
সব মনে রাখা হবে সব কিছু মনে রাখা হবে;

তোমায় যেন চিরকাল অভিসম্পাত করা যায় তার ব্যবস্থা করে রাখা হবে
তোমার কালো কীর্তির গায়ে যেন কালি লাগানো যায়, তার ব্যবস্থা করে রাখা হবে
তোমার এই মারণ খেলা যেন না ভুলি কখনও, সেই অঙ্গীকার নেওয়া হবে
সব মনে রাখা হবে, সব কিছু মনে রাখা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top