প্রধান শিক্ষকের কাছে আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক চিঠি

বাণীবিতান ডেস্ক।।

আব্রাহাম লিংকন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী, উদার এবং বিচক্ষণশীল। বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান মতবাদের পুনরুত্থানে আব্রাহাম লিংকনের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি কখনো দাস প্রথা মানতে পারতেন না। তাই ১৮৬০ সালে মার্কিন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। এর মাত্র তিন বছরের মাথায়ই অর্থাৎ ১৮৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান এবং মুক্তি ঘোষণা (Emancipation Proclamation) এর মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেন আব্রাহাম লিংকন। তবে এই প্রথার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাকে। তবুও থেমে থাকেনি তাঁর মানবতার পক্ষের লড়াই। তিনি তাঁর সন্তানকে এই কথা শেখাননি যে, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ছেলে হয়ে অযৌক্তিক সুবিধা নিতে হবে।

১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কেনটাকি লগ কেবিনে একটি সীমান্ত পরিবারে জন্মেছিলেন আব্রাহন লিঙ্কন। যিনি পরে ইন্ডিয়ানা এবং ইলিনয়ে গিয়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি । দারিদ্র্যতার কারণে বেশিদূর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভও হয়নি আব্রাহাম লিঙ্কনের।  মাত্র আঠারো মাস আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল তাঁর। কারণ তিনি তার পরিবারের আয়ের পরিপূরক কাজ করতেন।

আর ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে প্রাণ হারান মহান এই নেতা।

মৃত্যুর আগে আব্রাহাম লিংকন তাঁর সন্তানকে শিখিয়েছিলেন, শিক্ষকের কাছে সব ছাত্রই সমান। এখানে রাষ্ট্রপতি কিংবা অন্য কারো সন্তানের মধ্যে বিভেদ না থাকে। তাই তাঁর সন্তানের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন আব্রাহাম। যে চিঠি এখন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অমৃতবার্তা বয়ে বেড়ায়।

চিঠিটির অনুবাদ এরকম-
মাননীয় মহাশয়,
আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন- এটাই আপনার কাছে আমার বিশেষ দাবি।
আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন – সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়। তাকে এও শেখাবেন প্রত্যেক খারাপ মানুষের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে। প্রত্যেক স্বার্থবান রাজনীতিকের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকে। তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অনেক বেশি মূল্যবান। এও তাকে শেখাবেন, কীভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কিভাবে বিজয়োল্লাস উপভোগ করতে হয়।

হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দিবেন। যদি পারেন নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন আগেভাগেই এ কথা বুঝতে পারে- যারা পীড়নকারী তাদেরই সহজে কাবু করা যায়। বইয়ের মাঝে কী রহস্য আছে, তাও তাকে বুঝতে শেখাবেন।

আব্রাহাম লিঙ্কন তাঁর চিঠিতে আরো লিখেছেন,  আমার পুত্রকে শেখাবেন – বিদ্যালয়ে নকল করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশী সম্মানের। নিজের উপর তার যেন সুমহান আস্থা থাকে। এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুলও মনে করে। তাকে শেখাবেন, ভদ্রলোকের প্রতি ভদ্র আচরণ ও কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে। আমার পুত্র যেন এ শক্তি পায়- হুজুগে মাতাল জনতার পদাঙ্ক অনুসরণ না করার। সে যেন সবার কথা শোনে এবং তা সত্যের পর্দায় ছেঁকে যেন ভালোটাই শুধু গ্রহণ করে- এ শিক্ষাও তাকে দিবেন।
সে যেন শিখে দুঃখের মাঝে কীভাবে হাসতে হয়। আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই এ কথা তাকে বুঝতে শেখাবেন। যারা নির্দয়, নির্মম তাদের সে যেন ঘৃণা করতে শেখে। আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে সাবধান থাকে।
আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না। কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য হওয়ার সাহস না থাকে। থাকে যেন সাহসী হওয়ার ধৈর্য। তাকে এ শিক্ষাও দিবেন- নিজের প্রতি তার যেন সুমহান আস্থা থাকে আর তখনই তার সুমহান আস্থা থাকবে মানবজাতির প্রতি।
ইতি, আপনার বিশ্বস্ত

আব্রাহাম লিংকন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top