
বইটি কেন পড়বেন?
প্রায় দশ থেকে বিশ বিলিয়ন বছর আগে এক মহাগর্জনে সৃষ্টি হয়েছিল মহাবিশ্বের। এরপর কেটে যায় অনেক বিলিয়ন বছর। আর সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয় সৌরজগত। আমাদের গ্রহ পৃথিবী, আমাদের চাঁদ, আরো গ্রহ আরো চাঁদ। অনন্ত ঘন এক বিন্দুর বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয়েছিল এই মহাবিশ্বের। যা আজো সৃষ্টি হয়েই চলছে অবিরাম। মহাবিশ্ব এক অনন্ত অসীম চিরসম্প্রসারণশীল এলাকা। সেভাবেই আজো বেড়েই চলছে মহাবিশ্ব। জ্যোতির্বিজ্ঞান একের পর এক অসামান্য সব আবিস্কার করে চলছে শতকে শতকে। আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে, আমরা কোনো অচল বদ্ধ মানুষ নই। আমরাও মহাশূন্যের অভিযাত্রী। পৃথিবী নামক অসাধারণ মহাশূন্যায নটি আমাদের নিয়ে ছুটে চলছে নিরন্তর।
এক সময় সবাই ভাবতো তারা আছে পৃথিবীর কেন্দ্রে। আর পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে ঘুরছে সূর্য, চাঁদ ও লক্ষকোটি তারা। প্রাচীণ জ্ঞানীরাও বলে গেছেন, পৃথিবী স্থির। মানুষের ধর্মের বইগুলোও এ ধারণাকে বলে গেছে বদ্ধমূল বিশ্বাসে।
প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে কোপারনিকাস বদলে দেন সৌরজগতকে। পৃথিবীর বদলে তিনি সৌরজগতকে বসান কেন্দ্রে। এর মাধ্যমেই সৌরজগতে সৃষ্টি হয় শৃঙ্খলা। এরপর অনেক শত বছর কেটে গেছে, আবিস্কৃত হয়েছে মহাবিশ্বের অজস্র সত্য। মানুষ এগিয়ে গেছে আরো সামনের দিকে। কিন্তু এখন আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি পৌরাণিক জগতের দিকে। অনন্ত অসীম ও সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বকে ভুলে আমরা ঢুকে গেছি সেই বদ্ধমূল পৃথিবীতে। আর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন রকম বিধাতারা।
এক বিশুদ্ধ চিন্তার লেখক হুমায়ুন আজাদ মহাবিশ্ব’ বইটি লিখেছেন পৌরাণিক মানুষদের সামনে মহাবিশ্বকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তাঁর মতো একজন গুণী কবি, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিকের হাতের ছোঁয়ায় ঠিক যেন কবিতার মতো হয়ে উঠেছে জ্যোতির্বিজ্ঞান। এর প্রতিটি স্তবক পুরানকে বাতিল করে এগিয়েছে বিজ্ঞান মনস্কের দিকে।
মহাবিশ্ব বইটিতে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন, সাধারণ মানুষ জানেই না সূর্য নামের মাঝারি একটি তারাকে ঘিরে ঘুরছে এই পৃথিবী ও আরো আটটি গ্রহ। রয়েছে নক্ষত্রপুঞ্জের পর নক্ষত্রপুঞ্জ। কিন্তু যারা জানে পৃথিবী ঘুরছে সূর্যকে ঘিরে, তারাও আজ ভুলতে বসেছে। অথচ গতে কয়েক শতকে মহাবিশ্বকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন নিজেদের পল্লীর মতো করে। হুমায়ুন আজাদের এই বই পড়লে কিছুটা হলেও পৌরাণিক যুগের অন্ধকার কাটবে।